বর্ধমানের গলসি ২ ব্লকের জয়কৃষ্ণপুর গ্রাম লাগোয়া দামোদর নদে অবৈধভাবে বালি তোলার ঘটনায় স্থানীয় প্রশাসনকে জানিয়েও কোনো ফল না হওয়ায় গ্রামবাসীরা দ্বারস্থ হলেন মুখ্যমন্ত্রীর কাছে। এই ঘটনায় ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি হয়েছে। রবিবার পৌষ সংক্রান্তির দিনেই জয়কৃষ্ণপুর গ্রামের বাসিন্দারা সরাসরি গিয়ে হাজির হন মুখ্যমন্ত্রীর কালিঘাটের দপ্তরে। সেখানে তাঁরা এই অবৈধ বালি খাদান নিয়ে সমস্যার কথা তুলে ধরেন। এরপরই মুখ্যমন্ত্রীর অফিসার অন স্পেশাল ডিউটির অফিসার দিব্যজ্যোতি দাস জেলা পুলিশ সুপার কুণাল আগরওয়ালকে এব্যাপারে দ্রুত ব্যবস্থা নেবার নির্দেশ দেন। একইসঙ্গে গ্রামবাসীদের গোটা বিষয়টি
জেলাশাসক এবং জেলা পুলিশ সুপারকে জানানোর নির্দেশ দিয়েছেন। সেই নির্দেশের পরিপ্রেক্ষিতেই মঙ্গলবার জয়কৃষ্ণপুরের গ্রামবাসীরা হাজির হন জেলাশাসক ও জেলা পুলিশ সুপারের কাছে।

এদিন গ্রামবাসী ভবেশ ভক্ত, পরিমল সরকার, সাধন বালো, গোপাল বিশ্বাস প্রমুখরা অভিযোগ করেছেন, ১৯৭৮ সালের বন্যায় এই এলাকার প্রায় ৬০০ একর জমি নদী ভাঙনে শেষ হয়ে যায়। এর পরবর্তীকালে সরকারের ১০০ দিনের কাজে নদীর পাড়কে বালির বস্তা দিয়ে বাঁধিয়ে কৃষি রক্ষার চেষ্টা করা হয়। গ্রামবাসীরা জানিয়েছেন, সম্প্রতি বিমল ভক্ত এবং নারায়ণ নন্দী নামে দুই ব্যক্তি বিএলআরও-র অনুমোদন নিয়ে এই জমির ওপর দিয়ে অবৈধভাবে বালি তুলছেন মেশিন দিয়ে। এব্যাপারে তাদের কাছে জানতে চাওয়া হলে উল্টে তারা নানাভাবে প্রাণনাশেরও হুমকি দিচ্ছেন। গ্রামবাসারী অভিযোগ করেছেন, সম্প্রতি গ্রামবাসীরা একজোট হয়ে এই কাজের প্রতিবাদ করায় কিছুদিন বালি তোলার কাজ বন্ধ রাখা হয়েছিল। কিন্তু সম্প্রতি আবার শুরু হয়েছে। গ্রামের মধ্যে দিয়ে এবং তিন ফসলী ব্যক্তিগত মালিকানায় থাকা জমির ওপর দিয়ে গড়ে প্রতিদিন ২০০০ লরি বালি যাতায়াত করায় সমস্ত কৃষি জমি ধ্বংস হতে বসেছে। একইসঙ্গে দুর্ঘটনারও সম্ভাবনা বাড়ছে। প্রায়শই এই লরীর তলায় পড়ে গৃহপালিত পশুদের মৃত্যুও হচ্ছে। গ্রামবাসীরা জানিয়েছেন প্রায় ৫০০ পরিবারের বাস রয়েছে এই গ্রামে। কমবেশী প্রত্যেকেই এই ঘটনায় আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন। তাঁরা জানিয়েছেন, এব্যাপারে স্থানীয় গোহগ্রাম গ্রাম পঞ্চায়েত, গলসি ২ বিডিও এবং গলসি থানাকে জানালেও কোন সুফল মেলেনি। বাধ্য হয়েই তাই তাঁরা সরাসরি রবিবার মুখ্যমন্ত্রীর দ্বারস্থ হন। আর সেখান থেকে নির্দেশ দেবার পর এদিন জেলাশাসক ও জেলা পুলিশ সুপারের কাছেও তাঁরা তাঁদের অভিযোগ জানিয়েছেন।

এব্যাপারে জেলাশাসক অনুরাগ শ্রীবাস্তব জানিয়েছেন, গ্রামবাসীদের এই অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে গলসি বিএলআরওকে তদন্ত করে দ্রুত রিপোর্ট পাঠাতে বলা হয়েছে। ওই ঘাট বৈধ না অবৈধ তা জানাতে বলা হয়েছে। একইসঙ্গে অবৈধ হলে দ্রুত তা বন্ধ করে দেওয়া হবে। অন্যদিকে বৈধ হলেও গ্রীণ ট্রাইব্যুনালের নির্দেশ অনুসারে গ্রামবাসী তথা সাধারণ মানুষের ক্ষতি করে বালি তোলা সম্পর্কে নিষেধাজ্ঞা মানা হচ্ছে কিনা তাও খতিয়ে দেখে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

Like Us On Facebook