প্রায় ৫০০ বছর আগে চৈতন্যদেব শ্রীকৃষ্ণবিজয় কাব্যের রচয়িতা মালাধর বসুর ছেলে লক্ষ্মীকান্ত বসুকে পুরীর জগন্নাথ দেবের রথ টানার জন্য বর্ধমানের কুলীনগ্রাম থেকে রথের দড়ি আনার নির্দেশ দিয়েছিলেন। চৈতন্যদেবের আদেশে লক্ষ্মীকান্ত বসু কুলীনগ্রাম থেকে সেই রথ টানার দড়ি নিয়ে পৌঁছেছিলেন পুরীতে। সেই ঘটনাকে মাথায় রেখেই বর্ধমানের জামালপুরের কুলীনগ্রামের রথযাত্রা প্রায় ৪৫০ বছরে পা দিল। কুলীনগ্রাম লাগোয়া গোপালপুর স্কুলের শিক্ষক তথা কোলসরা গ্রামের বাসিন্দা সমীর ঘোষাল জানিয়েছেন, কয়েকশো বছর ধরে এই পরম্পরা চলে আসার পর আস্তে আস্তে দড়ি পাঠানো বন্ধ হয়ে যায়। পরিবর্তে কুলীনগ্রাম থেকে পাট ও শোন দিয়ে তৈরী বিশেষ ওই দড়ির উপকরণ একটি প্যাকেটে ভরে তা পাঠানো হত পুরীতে। মূল দড়ির সঙ্গে ওই উপকরণকে ছুঁইয়ে নেওয়া হত। কিন্তু এরপরই বসু পরিবারের সদস্যরা কুলীনগ্রাম থেকে বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়েন। ফলে দড়ির ওই উপকরণও পাঠানো বন্ধ হয়ে যায় প্রায় ৫০ বছর আগেই। তিনি জানিয়েছেন, ঐতিহ্য মেনেই আজও কুলীনগ্রামের এই রথ টানা হয়। বসু পরিবারের উদ্যোগেই কুলীনগ্রামে রথযাত্রা শুরু হয়। বর্তমানে যে রথটি টানা হয় তার বয়স প্রায় ষাট। কাঠের তৈরী রথটির উচ্চতা প্রায় ৩০ ফুট। দৈর্ঘ্য ও প্রস্থে প্রায় ১৬ ফুট। রয়েছে ৬টি লোহার চাকা। তিনটি ধাপ রয়েছে রথে। পাঁচ চূড়া বিশিষ্ট এই রথের উপরের ধাপে থাকেন জগন্নাথ, সুভদ্রা ও বলরাম। রথের দিন গ্রামের মাঝে অবস্থিত জগন্নাথ মন্দির থেকে বিশেষ পূজো অর্চনার মধ্যে দিয়ে রথকে টেনে আনা হয় গ্রামের রথতলায়। আবার ফের ফিরিয়ে নিয়ে আসা হয় জগন্নাথ মন্দিরে। উল্টোরথেও একইভাবে রথ টানা হয়।

Like Us On Facebook