‘মনরে কৃষিকাজ জান না… এমন মানব জমিন রইল পতিত… আবাদ করলে ফলত সোনা’ – এ যেন রামপ্রসাদি গানের বাস্তব রূপায়ণ। শিল্পের জন্য বরাদ্দ পড়ে থাকা জমিতে আবাদ করে সোনা ফলাচ্ছে দুর্গাপুরের পারদ গ্রামের প্রদীপ, নিমাই, মমতারা। গত ২৫ বছর ধরে বেশ কয়েক একর পড়ে থাকা সরকারি জমির সদব্যবহার করে গোটা গ্রামের মানুষের এখন রুজি-রোজগারের এক মাত্র উপায়। দুর্গাপুর গভর্ণমেন্ট কলেজ সংলগ্ন রাস্তার দুই পাশে দুর্গাপুর ইস্পাত কারখানা ও এডিডিএ’র বিস্তীর্ণ জমি দীর্ঘদিন থেকে পড়ে আছে। দুর্গাপুর ইস্পাত কারখানার পড়ে থাকা এই জমিতে দুর্গাপুর নগর নিগম একসময় শহরের আবর্জনা ফেলত। দুর্গন্ধে সেখান দিয়ে পথ চলাই দায় ছিল। অপরদিকে এডিডিএ’র বিস্তীর্ণ জমি পড়ে রয়েছে। ওই জমিকে ঘিরে মাঝে মধ্যে বিভিন্ন সরকারি প্রকল্পের কথা শোনা গেলেও আজ পর্যন্ত কিছুই বাস্তবায়িত হয়নি।

এডিডিএ ও ডিএসপি’র পড়ে থাকা ওই জমির নোংরা পরিষ্কার করে চাষযোগ্য করে গোটা পারদ গ্রামের মানুষের রুজি রোজগার চলছে। বছরে দু’বার ফসল ফলাতে শীত-গ্রীষ্ম-বর্ষা তিন মরসুমই মাথার ঘাম পায়ে ফেলে অক্লান্ত পরিশ্রম করছেন মানুষগুলো। গত ২৫ বছর ধরে একইভাবে সরকারি জমিকে বুকে ধরে চাষযোগ্য করে ফসল ফলাচ্ছেন পারদ গ্রামের খেটে খাওয়া মানুষগুলো। সেচের কোন ব্যবস্থা না থাকলেও চাষের জন্য প্রয়োজনীয় জলের ব্যবস্থা নিজেরাই করে নিয়েছেন বলে জানান নিমাই, প্রদীপরা। বর্ষার মরশুমে ওই জমিতে কুমড়ো, লাউ, ঝিঙ্গে, শশার ফলন হয় এবং শীতের মরসুমে টম্যাটো, ফুলকপি, বাঁধাকপি ইত্যাদির ফলন হয়। ওই সব সব্জি বিক্রি করেই রুজি-রোজগার চলে পারদ গ্রামের মানুষদের। দুর্গাপুর ইস্পাত নগরীর পথ চলতি মানুষ কিনে নিয়ে যায় ওই সব টাটকা সব্জি। প্রদীপ গড়াই, নিমাই বাগদি ও মমতা গড়াই বলেন, ‘শিল্পের জন্য নির্ধারিত সরকারি পড়ে থাকা জমিকে চাষযোগ্য করে গত ২৫ বছর ধরে আমরা ফসল ফলাচ্ছি। এই জমিই আমাদের অন্নদাত্রী।’ এছাড়াও অমরাবতী এমএএমসি’র পরিত্যক্ত বিস্তীর্ণ জমিতে ধান চাষও করছে পারদ গ্রামের মানুষজন। ২নং জাতীয় সড়কের পাশে ডিএসপি’র জমিতেও চাষ হচ্ছে একইভাবে। শিল্পের পরিত্যক্ত জমিই এখন চাষযোগ্য করে রুজি রোজগার চলছে দুর্গাপুরের কয়েকশ মানুষের।