ভোর হতে না হতেই বুথে বুথে লম্বা লাইন। বেলা গড়াতেই একটু একটু করে বুথ দখলের চিত্র ফুটে উঠতে শুরু করে গোটা জেলা জুড়েই। জেলার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ঘনঘন ফোনে অভিযোগ জানানো হয়ে তাঁরা শাসকদলের হাতে আক্রান্ত। বুথ দখল করে নিয়েছে। মেরে বিরোধীদের বুথ থেকে বার করে দেওয়া হয়েছে।

এদিন বেলা বাড়তেই প্রথম সংঘর্ষের খবর আসে মেমারির ব্রাহ্মনপাড়া প্রাথমিক বিদ্যালয়ের বুথ থেকে। তৃণমূল-বিজেপি সংঘর্ষে আহত হন সেখ সুরমান নামে এক তৃণমুল কর্মী। এলাকায় তীব্র উত্তেজনা দেখা দেয়। তৃণমূলের অভিযোগের তীর বিজেপির দিকে। এদিন সকাল ৯টা বাজতেই শক্তিগড়ে উত্তর বাজার এলাকায় বুথ দখল করার অভিযোগ ওঠে তৃণমূলের বিরুদ্ধে। ফের উত্তেজনা দেখা দেয় মেমারিতে। মেমারির দেউলগ্রামে ১২৩ ও১২৪ নম্বর বুথে শাসকদলের বিরুদ্ধে বুথ দখলের অভিযোগ তোলে সিপিএম। খবর পেয়ে পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতির সামাল দেয়। যদিও অভিযোগ অস্বীকার করে তৃণমূল।

ভাতারের মুরাতিপুরে সিপিএম সমর্থকদের ওপর তৃণমুলের হামলার অভিযোগ ওঠে। অভিযোগ অস্বীকার করে তৃণমুল। রায়নার ধারাণে সিপিএমের হাতে জখম হন পলাশন গ্রাম পঞ্চায়েতের তৃণমূল কংগ্রেস প্রার্থী জাকির হোসেন। তৃণমূলের অভিযোগ, সিপিএম তাদের উপর হামলা চালায়। পাল্টা একই অভিযোগ তৃণমূলের বিরুদ্ধে সিপিএমের। অভিযোগ, ভাতাড়ের বামুনারা পঞ্চায়েতের কংগ্রেসের ১১৪ নং বুথের প্রার্থী সম্পাতি হাটি আক্রান্তে হন বিজেপি সমর্থকদের হাতে। জখম সম্পাতি হাটিকে ভর্তি করা হয়েছে বর্ধমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। জামালপুরের চাঁদপুর স্কুলে ৪টি বাইক পুড়িয়ে দেওয়ার, সাধারণ ভোটারদের মারধোর করার অভিযোগ ওঠে তৃণমূলের বিরুদ্ধে।

মেমারির বড় পলাশনে নির্দল প্রার্থীকে মেরে বার করে দেওয়ার অভিযোগ। গলসি থানার ভুঁড়ি পঞ্চায়েতের মোহনপুর গ্রামে নির্দল প্রার্থী মিতা রায় এবং তার স্বামী সুব্রত রায়কে মারধর করার অভিযোগ ওঠে তৃণমূলের বিরুদ্ধে। অভিযোগকারিরা জানিয়েছেন, ব্যাপক ছাপ্পা ভোট দিয়েছে তৃণমূলের দুষ্কৃতীরা। এদিন গলসির তারানগর, উচ্চগ্রামে তৃণমূল কংগ্রেসের পক্ষ থেকে ব্যাপক বোমাবাজি করে বুথ দখলের অভিযোগ উঠেছে।

একদিকে যেমন সোমবার ভোটকে ঘিরে বিক্ষিপ্ত সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে তেমনি ভোটের শান্তির চিত্রও দেখা গেছে। মেমারির আমোদপুরে মানুষের বদলে মাটিতে রয়েছে সারিবদ্ধ ইট। ভোটদাতাদের প্রতিনিধিস্বরূপ ইট। সাতসকালেই ভোটের বিচিত্র এই রূপ দেখা গেল মেমারির আমোদপুর উচ্চ বিদ্যালয়ে। উৎসবের মেজাজে ভোট দিলেন পূর্ব বর্ধমানের কাটোয়া বাদে কালনা, বর্ধমান সদর উত্তর ও বর্ধমান সদর দক্ষিণ মহকুমার সাধারণ মানুষ। রোদ ও ভীড় এড়াতে ভোর থেকেই বাড়ির পুরুষরা মহিলাদের জন্য ভোটের লাইনে ইঁট রেখে এই ব্যবস্থা করেছেন। বেলা বাড়তেই জায়গায় জায়গায় বুথে বুথে দীর্ঘ লাইন শুরু হল।

জেলার জামালপুর থেকে রায়না, খণ্ডঘোষ, মেমারি ১ ও ২, ভাতার বর্ধমান সদর ১ ও ২নং ব্লক, গলসি, আউশগ্রাম সর্বত্রই একই চিত্র। সকাল থেকে বিকাল পর্যন্ত লাইনে দাঁড়িয়ে ভোট দিয়েছেন সাধারণ মানুষ। তীব্র গরম উপেক্ষা করেই ভোটের লাইনে দাঁড়িয়েছেন বৃদ্ধ-বৃদ্ধারাও। নাতি-নাতনিদের হাত ধরে কিংবা হাতের লাঠিকে শক্ত করে বাগিয়ে ধরেই তাঁরা ভোটের লাইনে এসে নিজের গণতান্ত্রিক অধিকার প্রয়োগ করে গেলেন। গলসির বাহিরঘন্যার একটি বুথে সারিবদ্ধ মহিলাদের লাইন। তৃণমূল প্রার্থীর স্বামী সফর মল্লিক জানিয়েছেন, সকাল থেকেই গ্রামের মহিলা থেকে পুরুষরা রীতিমত আনন্দ করেই ভোট দিয়েছেন।



Like Us On Facebook