মাকে ডাক্তার দেখিয়ে মোটর সাইকেলে বাঁশের সেতু পেড়িয়ে যাবার সময় বাইক থেকে ছিটকে পড়ে গিয়ে দামোদরে তলিয়ে গেলেন মা রেহেনা বেগম। চাঞ্চল্যকর এই ঘটনা ঘটেছে বর্ধমানের বড়শুলের দামোদরের ঘাটে। সোমবার সন্ধ্যে বেলায় বড়শুলে ডাক্তার দেখাতে এসেছিলেন চক্ষ্ণণজাদি গ্রামের বাসিন্দা রেহেনা বেগম ছেলে কিসমত সেখকে নিয়ে। মোটরবাইকে দামোদরের ওপর অস্থায়ী বাঁশের সেতুর ওপর ভরসা করেই বড়শুলে আসেন তিনি।

ডাক্তার দেখিয়ে সন্ধ্যে নাগাদ তাঁরা বাড়ি ফিরছিলেন। এই সময় বাঁশের সেতুতে আটকে যায় মোটরবাইকের চাকা। নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে মোটর বাইক থেকে দামোদরের জলে ছিটকে পড়েন রেহেনা বেগম। মাকে বাঁচাতে মোটরবাইক ছেড়ে ছেলে কিসমত সেখও ঝাঁপিয়ে পড়েন জলে। এই সময় চিৎকার করে তিনি লোক ডাকারও চেষ্টা করেন। ওই ঘাটে সেই সময় লোকজন থাকলেও তারা কেউই সাহায্যের জন্য এগিয়ে আসেনি বলে অভিযোগ। রেহেনা বেগমের দেওর মহম্মদ উসমান মল্লিক জানিয়েছেন, মা জলে পড়ে যাবার সঙ্গে সঙ্গেই কিসমতও জলে ঝাঁপ দেন। ধরেও ফেলেন মায়ের হাত। কিন্তু জলের তোড়ে আর ধরে রাখতে পারেননি। এরপর কিসমত গ্রামে গিয়ে খবর দিলে গ্রামের মানুষ জন ছুটে আসেন। প্রায় হাজার খানেক গ্রামের মানুষ রাতভর জলে নেমে খোঁজাখুঁজি করেও মঙ্গলবার সন্ধ্যে পর্যন্ত কোনো খবর মেলেনি রেহেনা বেগমের।

এই ঘটনায় রীতিমত শোকাচ্ছন্ন হয়ে পড়েছেন ছেলে কিসমত সেখ। অন্যদিকে, এই ঘটনার পর জেলা বিপর্যয় মোকাবিলা দপ্তরকে জানানো হলেও তারা কেবলমাত্র একটি নৌকা নিয়ে কিছুক্ষণ খোঁজখুঁজি করেই চলে যান বলে অভিযোগ করেছেন উসমান মল্লিক। এমনকি ডুবুরি আনার জন্য তাঁরা দাবি করলেও মঙ্গলবারও কোনো ডুবুরি নিয়ে আসা হয়নি। এলাকার মানুষই উদ্ধারের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। এদিকে, এই ঘটনার পরই এলাকার মানুষ ক্ষোভে ফেটে পড়েছেন। মঙ্গলবার সকালে তাঁরা অস্থায়ী ওই বাঁশের সেতুটিতে ভাঙচুরও চালিয়েছেন।

বেড়ুগ্রাম গ্রাম পঞ্চায়েতে স্থানীয় পঞ্চায়েত সদস্য সাহাবুদ্দিন সেখ জানিয়েছেন, বড়শুলের সঙ্গে এই অস্থায়ী সেতু সহ খেয়া ঘাটের মাধ্যমে যোগাযোগ রয়েছে দক্ষিণ দামোদরের প্রায় ৭০টি গ্রামের। বছরে ৬ মাস নৌকা পারাপার হয়। বাকি ৬ মাস বাঁশের সেতু দিয়েই পারাপার করতে হয়। সমগ্র ঘাটটি অবৈধভাবে চলছে বলেই দাবী করেছেন গ্রামের মানুষ। তাঁরা জানিয়েছেন, হেঁটে পার হলেও এজন্য দিতে হয় ২টাকা, সাইকেল ও মোটর সাইকেলের জন্য ৫ – ১০ টাকা দিতে হয়। তাঁরা জানিয়েছেন, দীর্ঘদিন ধরেই তাঁরা এখানে পাকা সেতুর দাবি জানিয়ে আসছেন। কিন্তু এখনও পূরণ হয়নি। যদিও বর্ধমান জেলা পরিষদের সভাধিপতি দেবু টুডু জানিয়েছেন, ওই জায়গায় পাকা সেতুর জন্য ইতিমধ্যেই পরিকল্পনা জমা দেওয়া হয়েছে রাজ্য সরকারের কাছে। গ্রামবাসী দীপক মাইতি, ললিতা বিশ্বাস, রেজাউল সেখ প্রমুখরা জানিয়েছেন, সাম্প্রতিক কালে এইভাবে ৩ জনের মৃত্যুও হয়েছে। ২জন জলে পড়ে গিয়েও বেঁচে ফিরেছেন।

Like Us On Facebook